অংশীজনের আলোচনার সুপারিশ রাখা হচ্ছে না বাজেটে
25 June 2021
নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে বাজেট তৈরি হচ্ছে বছরের পর বছর। অথচ বাজেট তৈরি করা হয় জনগণের জন্য। কিন্তু জনগণের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা হয় না বাজেট তৈরির আগে। বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও তার কোনো সুপারিশ বাজেটে রাখা হয় না।
বাজেট নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। ‘বাংলাদেশ কি বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধারের পথে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন মন্তব্য করেন তারা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) গতকাল ওয়েবিনারটির আয়োজন করে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
এতে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ইকোনমি পিকুলিয়ার (অদ্ভুত) মডেলে রয়েছে। একটা গোষ্ঠীতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী দেশকে পরিচালনা করছে। ১০ হাজার লোক কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কর আদায় হয়েছে। আট লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত কয়েকগুণ খরচ করে যে প্রকল্প করা হচ্ছে, সেগুলো জিডিপিতে চলে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক মডেল চালু আছে, তা বন্ধ হবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তাদের সুবিধা দিতে হবে, এক থেকে দুই শতাংশ মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। যারা অর্থনীতি সচল করবে, তাদের কাছে টাকা যাচ্ছে না। কারণ
হলো মহেশ আর গফুরের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ বোধ করছে না। ভোটের প্রয়োজন হয় না। কালোটাকা সাদা করেছে যারা, তাদের কি দুদক জিজ্ঞাসা করেছে? জিজ্ঞাসা করবে শুধু বিরোধীদের।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের আইনগত অধিকার সরকারের। কিন্তু যেহেতু বাজেটটি জনগণের জন্য, তাই তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু তারা তা করছেন বলে আমরা দেখিনি। বাজেট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যেও কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই।’
আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সেখানকার প্রস্তাবনাগুলোও বাজেটে প্রতিফলন হতে দেখা যায় না। বাজেট ঘোষণার পর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে তাদের সংসদে সেটি নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এমএ মান্নান বলেন, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ‘গিয়ার’ হলো বাজেট। হাই-গিয়ারে যাবে, নাকি লো-গিয়ারে যাবে, নাকি নিউট্রালি বসে থাকবে, তা ঠিক করার অধিকার সরকারের আছে। অবশ্য বাজেটের কিছু জায়গা ‘পলিশ’ করার প্রয়োজন আছে। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মূল দায়িত্ব ছিল বাঙালিকে ঘরে ফিরিয়ে আনা, আস্থা দিয়ে বসবাস করানো। পেটে-ভাতে, জলে-পানিতে ও আলো-বাতাসে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতো ভদ্রভাবে বাস করার সে রকম একটি সুযোগ তৈরি করা। আমি স্বীকার করব, যে গতিতে আমরা আশা করেছিলাম, সে গতিতে আমরা পারিনি।’
News Courtesy: